২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কিশোরী মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যা করে পুকুরে লাশ ফেলে দেয় বাবা

আপডেট :
সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৫
57
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
ছবি :  

যশোর আদালতে স্বীকারোক্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক,প্রাপকনিউজ
যশোর: মনিরামপুরের রোহিতায় সাবেক এক ইউপি চেয়ারম্যানের পুকুর থেকে মাহমুদা সিদ্দিকা (১৩) নামে এক কিশোরীর বিবস্ত্র লাশ উদ্ধারের মূল রহস্য উদ্ধার করেছে পুলিশ। দোকান থেকে রুটি চুরি করে খাওয়ার অপরাধে কিশোরীর বাবা মাওলানা আইনুল হক নিজেই মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ পুকুরে ফেলে দিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার আদালতে মেয়েকে হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আইনুল হক।
মনিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবলুর রহমান খান জানান, কিশোরী মাহমুদার বাবা আয়নুল হককে বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করা হয়। তিনি আদালতকে জানিয়েছেন ৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে বাড়ির পাশের দোকান থেকে রুটি চুরি করার অভিযোগ পেয়ে আইনুল হক ওইদিন বিকেলে নিজে ক্ষিপ্ত হয়ে মেয়েকে মারপিট করেন। এক পর্যায়ে তিনি মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের পুকুর পাড়ে ঝোপঝাড়ের মধ্যে রেখে দেয়। পরে এশার নামাজের পর নিজে পুকুরে লাশ ফেলে দেয়। আইনুল হক স্বীকার করেছে, লাশের পা ধরে পুকুরের পানিতে নিক্ষেপ করার সময় মেয়ের পরনের পায়জামা খুলে তার হাতে থেকে যায়। পরে সেই পায়জামা ও মেয়ের ওড়না পুকুরে ফেলে দেন আয়নুল হক।
এদিকে, মাদরাসা ছাত্রী মাহমুদার লাশের ময়নাতদন্ত রিপোর্টে তাকে ধর্ষণ ও শ্বাসরোধে হত্যার কথা উল্লেখ থাকায় গত ১২ সেপ্টেম্বর কিশোরীর মা শাহিনুর আক্তার বাদী হয়ে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনায় মনিরামপুর থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওসি বাবলুর রহমান খান বলেন, মাহমুদাকে ধর্ষণ করা হয়নি। মামলা থেকে ধর্ষণের ধারা বাদ যাবে।’
মাদরাসা ছাত্রী মাহমুদার বিবস্ত্র লাশ রোহিতা বাজারের পাশে পুকুর থেকে উদ্ধারের পর থানা পুলিশ স্থানীয় একাধিক ব্যক্তিকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এই নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে গ্রেফতার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, গত ৩-৪ দিন ধরে মেয়েটির বাবা আইনুল হক পলাতক ছিলেন। এতে করে পুলিশের সন্দেহ বাড়তে থাকে। আয়নুল হককে হাজির করতে পুলিশ কৌশল অবলম্বন করে বাদীকে থানায় নিয়ে যায়। পরে স্বামীকে হাজির করার শর্তে পুলিশ বাদীকে ছেড়ে দেয়। বাদী শাহিনুর আক্তার বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে স্বামীকে বাড়িতে ডেকে আনেন। এরপর স্বামীকে নিয়ে তিনি বিকেলে থানায় গেলে পুলিশ আয়নুল হককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আইনুল নিজেই মেয়েকে হত্যার ঘটনা স্বীকার করে। এরপর পুলিশ তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) আদালতে হাজির করে।
জানা যায়, মনিরামপুর উপজেলার রোহিতা বাজার এলাকায় স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে ৭-৮ বছর ধরে বসবাস করে আসছিলেন মাওলানা আইনুল হক। তিনি স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামতি করে সংসার চালাতেন। হত্যার শিকার মাহমুদা আইনুল হক ও শাহিনুর দম্পতির মেজ মেয়ে। মেয়েটি স্থানীয় একটি কওমি মাদরাসায় সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত। গত ৮ সেপ্টেম্বর মাদরাসা থেকে ফেরার পথে বাড়ির পাশের একটি দোকান থেকে রুটি চুরি করে মাহমুদা। দোকানদার ঘটনা টের পেয়ে কিশোরীর বাড়িতে গিয়ে তার বাবা-মাকে জানায়। তখন মেয়েটিকে তার মা দোকানে এসে লোকজনের সামনে জুতা পেটা করে। পরে বাড়িতে যাওয়ার পর মাহমুদাকে তার বাবা মারপিট করে। একপর্যায়ে বাবা আইনুল হক মেয়ের গলা টিপে ধরলে শ্বাসরোধ হয়ে মারা যায় মাহমুদা। পরে তার বাবা আইনুল হক বাড়ির পাশে পুকুরের পানিতে মেয়ের লাশ পুকুরে ফেলে দেন। এরপর ৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১০টার দিকে স্থানীয়রা পুকুর থেকে কিশোরীর বিবস্ত্র লাশ উদ্ধার করে পুলিশে খবর দেয়।

Leave a Reply

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram