চৌগাছায় মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ফলক অস্তিত্ব সংকটে, সড়ক অবহেলিত!

মিরোনুর বাপ্পী, চৌগাছা (যশোর): বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে খ্যাত যশোরের চৌগাছা উপজেলার গরীবপুর গ্রামের স্মৃতি আজ মুছে যেতে বসেছে। ১৯৭১ সালের ২১ ও ২২ নভেম্বর গরীবপুর-জগন্নাথপুর অঞ্চলে সংঘটিত হয়েছিল মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সঙ্গে পাক হানাদার বাহিনীর এক তীব্র সম্মুখযুদ্ধ। সেই ঐতিহাসিক যুদ্ধক্ষেত্রের প্রান্তেই অবস্থিত গরীবপুর নিউ মার্কেট মোড় থেকে গরীবপুর পূর্বপাড়া গোপাল মন্ডলের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তাটি এখন বেহাল অবস্থায় রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মারক হিসেবে বহু বছর আগে রাস্তার পাশে একটি পাথরের ফলক স্থাপন করা হয় যেখানে খোদাই করে লেখা আছে “বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: গরীবপুরের যুদ্ধক্ষেত্র ২১শে নভেম্বর ১৯৭১”। কিন্তু সেই স্মৃতিচিহ্ন আজ ভেঙে যেতে বসেছে। পাশাপাশি সেই গৌরবময় রাস্তাটি এখন সামান্য বৃষ্টিতেই কাদায় ডুবে যায়, সৃষ্টি হয় গর্ত ও জলাবদ্ধতা। এতে করে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন শিশু শিক্ষার্থী, স্থানীয় কমিউনিটি ক্লিনিকে না যেতে পারা সেবাপ্রার্থী, নামাজ পড়তে যাওয়া মুসল্লি এবং ভ্যান ও ইজিবাইকচালকরা।
স্থানীয় বাসিন্দা রফিউদ্দিন বলেন, এই রাস্তার পাশেই তো যুদ্ধ হয়েছিল। এই পথ ধরেই যুদ্ধের সময় লোকজন পালিয়েছিল, আবার মুক্তিবাহিনী প্রবেশ করেছিল। এখন সেই রাস্তা দিয়ে ছোট ছোট বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারে না, ভ্যানচালক রোজগার বন্ধ করে বসে থাকে।
গ্রামের আরেক বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম বলেন, যে রাস্তাটার দুই পাশে যুদ্ধের স্মৃতি, সেটাই এখন পড়ে আছে অবহেলায়। দু-এক স্থানে সামান্য সলিং করা হয়েছিল, কিন্তু পুকুরের ধস ও পানির চাপে তা ধ্বংসমুখী।
শুধু বাসিন্দারাই নয়, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। ইউপি সদস্য আশিকুর রহমান বলেন, আমরা চাই এই রাস্তাটি পিচিংসহ পুনর্নির্মাণ করা হোক। ধস ঠেকাতে প্যালাসাইড নির্মাণ ও কালভার্ট স্থাপন অত্যন্ত জরুরি। তিনি জানান, প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার মানুষ এই রাস্তায় চলাচল করে, কিন্তু রাস্তাটি এখন কার্যত অচল।

ইতিহাস ও মুক্তিযোদ্ধাদের বরাতে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর ঈদের দিন দুপুর ২টায় পাকবাহিনী গরীবপুর-জগন্নাথপুর মাঠে গোলাবর্ষণ শুরু করে। এরপর শুরু হয় তীব্র ট্যাংক যুদ্ধ ও গোলাগুলি। একপর্যায়ে যুদ্ধ চলে আসে এতটাই কাছাকাছি যে, সেখানে হাতাহাতি পর্যন্ত যুদ্ধ হয় যা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল। এই যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী ৭টি ট্যাংক হারিয়ে চট্টগ্রামে পালিয়ে যায়। ২১-২২ নভেম্বর চৌগাছা অঞ্চলে গরীবপুর যুদ্ধের স্মৃতি হিসেবে ঐতিহাসিক তাৎপর্যপূর্ণ। অথচ যে সড়ক দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে যাওয়া হয়, সেটি পানিতে ডুবে থাকে কিংবা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
চৌগাছা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক রাশিদুল ইসলাম রিতম বলেন,“যুদ্ধক্ষেত্রের পাশের রাস্তাটি শুধু চলাচলের মাধ্যম নয়, এটি ইতিহাসের পথে হাঁটার এক জীবন্ত প্রতীক। এই রাস্তার এমন করুণ অবস্থা আমাদের নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে ভুল বার্তা দেয়। আমরা চাই, রাষ্ট্র ও প্রশাসন এই অবহেলার দায় নিক এবং দ্রুত স্মৃতিচিহ্ন রক্ষা ও রাস্তা সংস্কারে পদক্ষেপ নিক। এটি শুধু উন্নয়নের দাবি নয়, এটি ইতিহাস ও চেতনার প্রতি দায়িত্ববোধ।'
এ বিষয়ে চৌগাছা উপজেলা প্রকৌশলী রিয়াসাত ইমতিয়াজ বলেন, 'গরীবপুর সড়কটি ভিপিপি প্রকল্পে প্রস্তাব আকারে উর্ধ্বতন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে এবং তালিকাভুক্ত হয়েছে।' অনুমোদন পেলেই দ্রুত কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.
donde comprar itraconazole en mar del plata
buying itraconazole purchase from uk
jak získat vzorky kamagra a
nejlevnější cena kamagra
acheter du kamagra en pharmacie sans ordonnance
achat kamagra beon pharmacie