২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ধর্ষণের পর কিশোরীকে হত্যা করে পুকুরে ফেলে আত্মহত্যা বলে প্রচার

আপডেট :
সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৫
90
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
ছবি :  

নিজস্ব প্রতিবেদক.প্রাপকনিউজ
যশোর: যশোরের মনিরামপুরে মাদ্রাসা পড়ুয়া এক কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যা করে পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। পরে এটি আত্মহত্যা বলে প্রচারের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় শুক্রবার অজ্ঞাত আসামি করে থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশ এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সোহাগ হোসেন (১৮) নামের এক কলেজছাত্রকে হেফাজতে নিয়েছে।
সোহাগ উপজেলার জয়পুর গ্রামের এখলাস উদ্দীনের ছেলে। পড়ালেখার ফাঁকে সোহাগ রাজমিস্ত্রির জোগাড়ির (শ্রমিক) কাজ করে।

জানা যায়, মঙ্গলবার গ্রামের একটি পুকুর হতে কিশোরীর নগ্ন মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। রুটি চুরির অপবাদ সইতে না পেরে সাতার না জানা কিশোরী পুকুরে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার হয়। আগের দিন মাদ্রাসা থেকে ফেরার পথে গ্রামে একটি দোকান হতে রুটি চুরি করায় কিশোরী জন সম্মুখে তার মা জুতা পেটা করেন। এতে অভিমানে আত্মহত্যা করতে পারে বলে অনেকেই ওই সময় মনে করেন।
এদিকে পরিবারের বাঁধা উপেক্ষা করে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় পুলিশ। এরপর বিষয়টি ভিন্নখাতে মোড় নেয়। ময়নাতদন্তে জানা যায়, কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।
ঘটনায় জড়িতরা ধর্ষণসহ হত্যাকাণ্ড আড়াল করতে কূটকৌশলের আশ্রয় নেয়। এতে দোকানের রুটি চুরির অপবাদ মাথায় রেখে ঘটনা ভিন্নখাতে নিতে সেটিকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতেই মরদেহ পুকুরে ফেলে দেওয়া হয় বলে অনেকেই ধারণা করছেন।
তবে, পুলিশ কয়েকটি ইস্যুকে সামনে রেখে এ ঘটনায় জড়িতকে শনাক্তের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
নিহতের মা জানান, মৃত্যুর আগের দিন রুটি চুরির কথা দোকান মালিক আলী হাসান জানালে তিনি সেখানে গিয়ে মেয়েকে জুতা দিয়ে মারপিট করে বাড়িতে আনেন। ওই দিন বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত তার সঙ্গে মেয়ে গোয়ালঘর পরিষ্কারের কাজ করেছে। পরে কখন বাড়ি থেকে বের হয় তিনি জানতে পারেননি। সম্মানের কথা ভেবে কাউকে না জানিয়ে নিজেরাই খুঁজতে থাকেন। পরদিন পুকুর থেকে মেয়ের মরদেহ উদ্ধার হয়।
নিহতের পিতা পার্শ্ববর্তী একটি মসজিদে ইমামতি করেন। তিনি বলেন, তার মেয়ে একটি কওমি মাদ্রাসায় মিজান (সপ্তম শ্রেণি) ক্লাসে পড়ত।
স্থানীয় কলেজ পড়ুয়া মিম জানান, ওইদিন বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে প্রাইভেট পড়াতে যাওয়ার সময় কিশোরীকে পুকুরে গোছল করতে দেখেন কিন্তু ফেরার সময় আর দেখেননি।
নিহত কিশোরীর বাড়ি হতে পুকুরে যেতে ঘন বাগান পার হতে হয়। তাদের বাড়িও অনেকটা নির্জন এলাকায়। অনেকের ধারণা গোছল শেষে বাড়ি ফেরার পথে কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়। সেটিকে ধামাচাপা দিতে কিশোরীকে হত্যা করা হয়। পরে ধর্ষণের আলামত নষ্টসহ পুরো ঘটনা আড়াল করতে আত্মহত্যা হিসেবে চালিয়ে দিতে কিশোরীর মরদেহ সুযোগ বুঝে পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়।
ময়নাতদন্তকারী কর্মকর্তা ডা. বাবুল কিশোর প্রতিবেদন দাখিলের আগে এ বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এদিকে এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে আটক সোহাগ রোহিতা গ্রামে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করতো। কিশোরীর মরদেহ উদ্ধারের পর দুই দিন কাজে না যাওয়ায় পুলিশ তাকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করেছে।
মনিরামপুর থানার ওসি বাবলুর রহমান খান এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলার কথা নিশ্চিত করে জানান, মাদ্রাসাছাত্রীর লাশের ময়নাতদন্তে ধর্ষণ ও হত্যার আলামত পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় সোহাগকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সন্দেহভাজন হিসেবে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram