২০ কোটি টাকার বকেয়া বিদ্যুৎ বিল দিতে পারছে না যশোর পৌরসভা

নিজস্ব প্রতিবেদক,প্রাপকনিউজ
যশোর: আলোর নিচে অন্ধকারে পরিণত হয়েছে যশোর পৌরসভা। প্রায় ২০ কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া, সড়ক বাতি অকেজোসহ নানা সংকটে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। আর্থিক সংকটে বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। শহরের অলিগলির সড়ক বাতি অকেজো থাকায় অন্ধকার থাকছে। তবে সংকটের মধ্যে শহরের গুরুত্বপূর্ণ ৮টি মোড়ে টাওয়ার লাইট স্থাপন করে আলো ঝলমলে করা হয়েছে। শহরের অলিগলি অন্ধকারে থাকায় নাগরিকের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের সক্ষমতা নেই প্রতিষ্ঠানটির। তবে অকেজো সড়ক বাতি সচল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি-(ওজোপাডিকো) ১ ও ২ বিভাগ যশোর পৌরসভায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে। যশোর পৌরসভার কাছে ওজোপাডিকোর বকেয়া প্রায় ২০ কোটি টাকা। এরমধ্যে ওজোপাডিকো-১ বিভাগের পাওনা ১০ কোটি ১৫ লাখ টাকা, ওজোপাডিকো-২ বিভাগের পাওনা ৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। ওজোপাডিকোর বিদ্যুতে সড়ক বাতি, সুইপার কলোনি ও পাম্পে ব্যবহৃত হয়। ২০১৭ সালে সড়ক বাতির ৩০টি মিটার ও পাম্পের ২৬টি মিটার ডিজিটাল করা হয়েছে। বর্তমানে এইসব প্রিপেইড মিটারের বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। প্রিপেইড মিটারে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকার সুযোগ নেই। বকেয়া বিলের পুরোটাই ম্যানুয়াল মিটারের আমলের। প্রিপেইড মিটার চালু হওয়ার পর আর বিল বকেয়া হয়নি। আবার পুরাতন বকেয়া বিদ্যুৎ বিলও পরিশোধ হয়নি। ফলে বকেয়া আদায়ে বার বার তাগিদ দিলেও সাড়া দেয়নি পৌরসভা।
এদিকে, যশোর পৌরসভায় ৯ হাজার ৪৫৫টি সড়ক বাতির মধ্যে দুই হাজার ৭৪৪টি অকেজো রয়েছে। বেশিরভাগ সড়ক বাতি নষ্ট ১ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে। সড়ক বাতি নষ্ট থাকায় শহরের অলিগলি অন্ধকার থাকছে। কয়েক মাস ধরে শহরের অলিগলি অন্ধকার নগরীতে পরিণত হয়েছে।
সম্প্রতি যশোর শহরের ৮টি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে টাওয়ার লাইট স্থাপন করা হয়েছে। এরমধ্যে শহরের দড়াটানায় একটি, মণিহার মোড়ে ২টি, পালবাড়ি মোড়ে একটি, চাঁচড়া চেকপোস্ট মোড়ে একটি ও টাউন হল ময়দানে একটি বড় টাওয়ার লাইট স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া শহরের চারখাম্বা মোড়ে একটি, সিভিল কোর্ট মোড়ে একটি ও জিরো পয়েন্টে একটি ছোট টাওয়ার লাইট স্থাপন করা হয়েছে।
পৌরসভার একজন কর্মচারী বলেন, তিনটি কারণে সড়ক বাতি নষ্ট হয়। বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারে শটসার্কিট, ক্যাবল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট ব্যবসায়ী সংযোগ তারে শটসার্কিট ও বর্ষা মৌসুমের কারণে সড়ক বাতি বেশি নষ্ট হয়। টেন্ডারের মাধ্যমে নতুন বাতি কিনে সংযোজন করতে অনেক দিন সময় লেগে যায়। এতে নাগরিকদের ভোগান্তি থেকেই যায়।’
এ বিষয়ে যশোর পৌর নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব জিল্লুর রহমান ভিটু বলেন, পৌরসভার কাজে কোন স্বচ্ছতা নেই। সর্বক্ষেত্রে পৌর প্রশাসন ব্যর্থ। তারা ব্যর্থতা ঢাকতে শহরের কয়েকটি স্থানে টাওয়ার লাইট লাগিয়ে আলোর ঝলকানি দেখাচ্ছে। কিন্তু শহরের অধিকাংশ অলিগলি অন্ধকার রয়েছে। গোটা পৌরসভার পরিস্থিতি আলোর নিচে অন্ধকার।’
তিনি আরও বলেন, শহরের মুজিব সড়কে টাওয়ার লাইট স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু ওই সড়কের পূর্ব-পশ্চিম জনবসতি এলাকা অন্ধকার থাকছে। শহরের রেলরোড আলো ঝলমলে। ওই রোর্ডের পূর্ব-পশ্চিমে অন্ধকার। শহরের চারখাম্বার রাসের চত্বরে আলোর ঝলকানি আছে। আশেপাশে তো অন্ধকার থাকছে। এভাবে নাগরিকদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলছে পৌর কর্তৃপক্ষ। অতীতেও মেয়র, কাউন্সিলররা অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে পৌরসভাকে ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। সেই ব্যর্থতার বোঝা টানছে নাগরিকরা।’
জানতে চাইলে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি-(ওজোপাডিকো-২) নিবাহী প্রকৌশলী জিএম মাহমুদ প্রধান বলেন, বর্তমানে প্রিপেইড মিটারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করায় নতুন করে বকেয়া পড়ছে না। কিন্তু পুরাতন বকেয়া আদায় সর্বশেষ আগস্ট মাসে যশোর পৌরসভাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া পরিশোধের তাগিদ দেওয়া হচ্ছে।’
জানতে চাইলে যশোর পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) মো. সাইফুজ্জামান বলেন, নিজস্ব আয় থেকে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হয়। আয় সংকটে বকেয়া বিল পরিশোধ সম্ভব হচ্ছে না। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে বকেয়া বিলের মধ্যে ৬ লাখ ৫৫ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, অচল সড়ক বাতি শিগগিরই সচল হবে। সড়ক বাতি ক্রয়ের টেন্ডার সম্পন্ন হয়েছে। এক মাসের মধ্যে অকেজো সড়ক বাতি পরিবর্তন করে নতুন বাতি সংযোজন সম্ভব হবে। এছাড়াও নতুন টাওয়ার লাইট সংযোজন করায় আলো বেড়েছে। বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়েছে।’
জানতে চাইলে যশোর পৌরসভার প্রশাসক (উপসচিব) মো. রফিকুল হাসান বলেন, বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের সক্ষমতা নেই পৌরসভার। এজন্য পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রিপেইড মিটারে বিল বকেয়া নেই।’